মঈনুস সুলতান

নিকারাগুয়ায় কবিদের সরণি : মঈনুস সুলতান
চিলতে বারান্দায় হ্যামোক

নিকারাগুয়ায় কবিদের সরণি

দিন কয়েক হলো আমি নিকারগুয়ার লেয়ন শহরে আছি। এখানে যে গেস্ট হাউসে বাস করছি তার নাম ‘কায়ে দে লস পয়েটাস’ বা কবিদের সরণি। লেয়নে আসার আগে আমি ইসতেলি বলে আরেকটি ছোট্ট শহরে বাস করছিলাম। আমি লেয়নে আসতে চাচ্চি শুনে, এবং আমি যেহেতু লেখালেখি করি তাই আমার এক আমেরিকান সুহৃদ মি. চার্লস এ গেস্ট হাউসের সুপারিশ করেন। তিনিও লেয়নে আসছিলেন, তো তাঁর পিকাপ ট্রাকে লিফট দিয়ে তিনিই আমাকে ‘কায়ে দে লস পয়েটাসে’ নামিয়ে দেন। মি. চার্লস নানাবিধ কাজকর্মে ব্যস্থ, তাই তিনি মাত্র এক রাত্রি থেকে ইসতেলিতে ফিরে গেলেও আমি এখানে থেকে যাই। লেয়ন শহরটা আমার ভালোই লাগছে, ভাবছি এখানে-এ গেস্ট হাউসে আরো কিছুদিন থেকে যাবো।

এ গেস্ট-হাউসে আছে প্রশস্ত বারান্দা, আর তার কোর্ট ইয়ার্ডটি হরেক রকমের পত্রপল্লব ও পুষ্পিত ঝোপের সবুজে ছড়ায় শ্যামল দীপ্তি। তাতে অবলীলায় উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি ও পরাগ মাখা মধুভুক পতঙ্গ। আমি কামরার বারান্দায় একটি বেতের ডেক চেয়ারে বসে গেস্ট-হাউসের স্বত্বাধিকারী অ্যান্থনি মেনডোঝাকে চোখে চোখে খুঁজি। তাকে দেখি না বটে, তবে পল এর বিস্তর টব দিয়ে সাজানো বৃত্তের ভেতরে তার রাইটিং স্পেস বা লেখালেখির ঠেককে বর্ণাঢ্য দেখায়। ওখানে লাল-নীল-হলুদে রং করা ক’খানা চেয়ার, তার রাইটিং টেবিলে ল্যাপটপের ডালা খোলা, তার পাশে বসে আরামসে হাই তোলে সিয়ামিজ বিলাই।

একসময় এ ম্যানশনটি ছিল মেনডোঝাদের দুই বা তিন পুরুষের বাসস্থান। তার পিতা প্রয়াত সিনিওর মেনডোঝা ছিলেন কার্গো জাহাজের আস্ত একটি কোম্পানির মালিক। বিপ্লবের সময় ভিটামাটি, সহায়-সম্পত্তি সব ফেলে অভিবাসী হয়ে আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সুইট ওয়াটারে। সুইট ওয়াটারে লাখ তিনেকের মতো নিকারাগুয়ান অভিবাসী বাস করছে বলে জায়গাটির লিটল মানাগুয়া বলেও পরিচিতি আছে। অ্যান্থনির জন্ম এই ম্যানশনে হলেও বেড়ে ওঠেন মূলত সুইট ওয়াটারে। কিছুদিন ফ্রান্সের এক বোর্ডিং স্কুলেও তিনি পড়াশোনা করেছেন। তার পূর্বপুরুষেরা নিকারাগুয়াতে স্প্যানিশ আমলে অভিবাসী হয়ে আসেন, তবে তাঁরা স্প্যানিশ বংশোদ্ভুত নন। তাঁদের শিকড় ফ্রান্সে। বিপ্লবের অনেক বছর পর ভোটে ডানমার্গের সরকার ক্ষমতায় ফিরে এলে জোরেশোরে জারি হয় বাজার অর্থনীতি। তখন অ্যান্থনি ফিরে আসেন নিকারাগুয়ায়। একটু তত্ত্বতালাবি করতেই ফিরে পান পৈতৃক ভিলাটি। তিনি সাহিত্য নিয়ে মেতে আছেন। তাই এখনো নিজের সংসার গড়ে তোলার সাবকাশ পাননি। তবে মস্তবড় এই পারিবারিক সুপরিসর ম্যানশনটি ব্যবহার করছেন গেস্টহাউস হিসাবে।

বর্ণাঢ্য রাইটিং স্পেস্
বর্ণাঢ্য রাইটিং স্পেস্

এ ভিলাটির নাম কেন কবিদের সরণি দেওয়া হয়েছে,এ বাবদে কোনো তথ্য আমি এখনো জোগাড় করে উঠতে পারিনি। তবে প্রয়াত সিনিওর মেনডোঝা যে কবিতার সমঝদার ছিলেন, তার কিছু আলামত দেখতে পেয়েছি। ভিলার সেলুনে গ্র্যান্ড পিয়ানোর দুদিকে দাঁড় করানো দুটি আলমারিতে সাজানো আছে স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষার প্রধান কবিদের বিস্তর বই-পুস্তক। তার ওপরে তৈলচিত্রে অদ্যাবধি বিরাজ করছেন প্রয়াত সিনিওর মেনডোঝা। দেশে বিপ্লব হলো, বদলে গেল সামাজিক মূল্যবোধ ও অর্থনীতি, কিন্তু তাঁকে অপসারণের কোনো প্রয়োজন পড়ল না। চিত্রটি যথাস্থানেই থেকে গেল। ব্যাপারটি বিচিত্রই বটে। সিনিওর মেনডোঝার কবিতা ছাড়া পাখিদের ডিমে তা দেওয়ার বিষয়েও আগ্রহ ছিল। সেলুনে আজ অব্দি রাখা আছে, তলায় তুলার তুলতুলে প্যাড লাগানো বেতের দুটি ঝুড়ি, যেখানে পাখিরা ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করত।

তাঁর সন্তান অ্যান্থনি, এ তরুণ কবি নন, তবে গদ্যকার তিনি। হালফিল একটি উপন্যাস লেখায় লিপ্ত আছেন। হররোজ নিয়ম করে পত্রপুষ্পে পল্লবিত আঙিনায় তাঁর বর্ণাঢ্য লেখার ঠেকে এসে তিনি বসেন। ল্যাপটপে খুটখাট করে কম্পোজ করেন একটি বা দুটি পৃষ্ঠা। ক্রমাগত লিখে যাওয়ার মতো মনঃসংযোগ তাঁর নেই। আড্ডা পছন্দ করেন বলে তাঁর রাইটিং স্পেসে আছে খান দুই রংচঙে রকিং চেয়ার। গেস্টদের কেউ অলস হয়ে দিন কাটালে তাকে ডেকে নিয়ে খোশগল্পে মাতেন। অ্যান্থনির সঙ্গে মি. চার্লসের অনেক দিনের পরিচয় আছে। তিনি ইসতেলি থেকে লেয়নে আসার পথে কবি সরণি নামক গেস্ট-হাউস ও তার চড়নদার অ্যান্থনির ঝোঁক, আচার, প্রবণতা মায় আদত খাসলৎ সম্পর্কে লম্বা-চওড়া এবারত দিয়েছেন।

সকালবেলা অলস বসে থাকতে দেখে তিনি আমাকে ডেকে নেন তাঁর লেখালেখির ঠেকে। বসতেই কাচের জগ থেকে আইস চকোলাতের খানিকটা ঢেলে দিয়ে হালকা গল্পগুজবে মাতেন। আমার আগ্রহ কিসে এ ব্যাপারে তিনিও মি. চার্লসের কাছ থেকে ওয়াকিবহাল হয়েছেন। আমি তাঁর উপন্যাসের বিষয় জানতে চাই। তিনি সাউথ সুদানের দারফুরের কথা বলেন। তাঁর তৃতীয় উপন্যাসের ড্রাফট পাবলিশার রিজেক্ট করলে তিনি কিছুদিন মাইল্ড ডিপ্রেশনে ভোগেন। তারপর ‘আফ্রিকান সোল আমেরিকান হার্ট’ নামক একটি সাহায্যকারী সংস্থার ভলান্টিয়ার হয়ে পাড়ি দেন সুদানের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল দারফুরে।

সুদানের বনিয়াদি শাসকশ্রেণী হচ্ছে মূলত মিসর থেকে আসা আরব বংশোদ্ভূত সেটেল্ড হওয়া ফিকে কালো গাত্রবর্ণের মুসলিম অভিবাসী সম্প্রদায়। সুদানের আদিবাসী ঘোরতর কৃষ্ণগাত্রবর্ণের খ্রিষ্টান ও প্রকৃতিপূজকদের সঙ্গে এদের নানাবিধ দ্বন্ধ ও সংঘাত চলছে শত শত বছর ধরে। ইদানীং তা সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নিলে সুদান সরকারের সক্রিয় সমর্থনে আরবিভাষী জানজাইড মিলিশিয়ারা হত্যা-ধর্ষণ-লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে তৈরি করে গণহত্যার পরিস্থিতি। সঠিক তথ্য পাওয়া মুশকিল, তবু বলা চলে, অ্যান্থনি মেনডোঝা যখন দারফুরে কাজ করতে যান, তত দিনে জাতিসংঘের একটি সংস্থার এস্টিমেট অনুযায়ী নিহত হয়েছে চার লাখ আশি হাজারের মতো মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী হয়েছে বিশ লাখের মতো তীব্র কালো আদিবাসী সম্প্রদায়। দারফুর থেকে ফিরে এসে অ্যান্থনি তাঁর প্রেক্ষাপটে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে লিখছেন একটি উপন্যাস।

অন্য একটি কামরার বারান্দায় হ্যামোকে শুয়ে ছিল একটি কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে। সে উঠে আঙিনার বাগানে নেমে পড়লে অ্যান্থনি আমাকে ফিসফিস করে বলেন, এর নাম সেইসা, দারফুরের ‘বর’ গোত্রের এ মেয়েটির পরিবারের সবার সম্ভবত মৃত্যু হয়েছে সংঘাতে। জাবেল-মারা পাহাড়ের পাদদেশে তার গোত্রের সবার ঘরবাড়ি পুড়ে গেলে সে পথে নামে। স্পষ্টত দারফুর থেকে অ্যান্থনি একা ফিরে আসেননি। সেইশা কিছু ঝরা জেসমিন কুড়িয়ে তা ঝিনুকের খোলে সাজাচ্ছে। অ্যান্থনি ফিসফিস করে বলেন, সেইশাই তাঁর উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। এসপানিওল ও ইংরেজিতে উপন্যাস লেখার চেষ্টা করে তিনি সফলকাম হননি। এবারকার উপন্যাস ইংরেজিতে ড্রাফট করে তা ফরাসি ভাষায় তরজমা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। আফ্রিকার ব্যাপার-স্যাপার ফ্রেঞ্চরা ভালো বোঝে। অ্যান্থনি কনফিডেন্ট যে, তাঁর এই উপন্যাস হবে ফাটাফাটি কিসিমের বেস্টসেলার। আমি তাঁকে অগ্রিম অভিনন্দন জানাতে গেলে তিনি আমাকে তাঁর লেখা প্রথম দুটি চ্যাপ্টারের ইংরেজি ড্রাফটের প্রিন্ট আউট দেওয়ার উদ্যোগ নেন। টেবিলের তলায় রাখা প্রিন্টারের কর্ড ল্যাপটপে জুড়তে একটু সময় নেয়।

এই ফাঁকে আমি বাগানে ঝরা জেসমিন কুড়াতে থাকা সেইশাকে অবলোকন করি। সে সবুজ পত্রপল্লবে ঝেঁপে আসা একটি গাছের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। তাকে দেখায় কালো উড ওয়ার্কে করা মূর্তির মতো। বাটিকের খুব রংচঙে র‌্যাপার কোমরে প্যাঁচিয়ে পরেছে সে। পূর্ব আফ্রিকার কিছু কিছু সম্প্রদায়ের সনাতন কেতানুযায়ী তার বাম স্তন সম্পূর্ণ অনাবৃত। মনে হয়, কাঠের কারিগর তার বুকে কেবল একটিমাত্র বৃন্তময় পেলব বৃত্ত কুঁদে তৈরি করেছেন। আজ খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙে গেলে আমি বারান্দায় এসে বসি। তখনো তাকে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। গাছগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে সে তার গোত্রের ভাষায় বিড়বিড় করে কিছু বলছিল।

প্রিন্ট-আউটের তাড়া জেমস ক্লিপে আটকে আমার হাতে দিতে গেলে সেইশা এসে দাঁড়ায় লেখালেখির ঠেকে। ঝিনুকে করে নিয়ে আসা ঝরা জেসমিন টেবিলে ছড়িয়ে দিলে অ্যান্থনি কৌটা থেকে বের করে তাকে দেন একটি জেনেক্স ট্যাবলেট। আইস চকোলাতে দিয়ে ট্যাবলেটটি গিলে সে নীরবে ফিরে যায় তার কামরার সংলগ্ন বারান্দায়। অ্যান্থনি দুটি জেসমিন তুলে শুঁকে বলেন, টাইম টু স্টার্ট রাইটিং। ইশারাটি বুঝতে পেরে আমি প্রিন্ট-আউট নিয়ে ফিরে আসি আমার বারান্দায়।

মি. চার্লস সেইশার বিষয়েও আমাকে অবগত করেছেন। তাই আজ ভোরে তাকে বাগানে ঘুরে বেড়াতে দেখে অবাক হই না তেমন। তবে একটি বিষয়ে খটকা লাগে। সে জেনেক্স নিচ্ছে, এই ড্রাগটি ব্যবহƒত হয় মূলত অ্যাংজাইটির জন্য। মেয়েটিকে দারফুর থেকে শিকড় উপড়ে নিয়ে আসা হয়েছে নিকারাগুয়ায়। দুশ্চিন্তা, স্নায়ু বিকলন কিংবা স্ট্রেস তার হতে পারে, সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শে তাকে জেনেক্সও দেওয়া যায়। তবে কৌটাটি সেইশাকে না দিয়ে তা অ্যান্থনি নিজের পকেটে রেখেছেন কেন? তাকে কি এ ড্রাগসে নির্ভরশীল করে রাখতে চান অ্যান্থনি? লেখালেখির ঠেকে এসে সে যখন দাঁড়ায়, তাকে আমি প্রথমবার খুব কাছ থেকে অবলোকন করি। বজ্রপাতে পোড়া কাঠের তীব্র কর্কশ কালিমার মতো তার চোখমুখ থেকে ঝলসে উঠেছিল গাঢ় বিষাদ।

আমি ডেক চেয়ারে বসে অ্যান্থনির দেওয়া চ্যাপ্টার দুটি পড়ি। ওখানে সেইশা নামেই একটি যুবতীর চরিত্র আছে। দারফুরের রুক্ষ কর্কশ মরুভূমিতে পানীয় জলের বড় কাহাত। মেয়েটি মাঝেসাঝে স্বপ্নে দেখত, চাপচাপ মাটি, কাঁকর ও পাথরের ভারী স্তরের নিচে রুপালি নহর। একমাত্র জলের উৎস কূপের পানি শুকিয়ে এলে ‘বর’ গোত্রের লোকজন তার স্বপ্নের বর্ণনা অনুসরণ করে মাটি খুঁড়ে সত্যি সত্যি আবিষ্কার করে জলধারা। ঘটনাটি চাউর হলে পানির অভাবে তাড়িত জানজাইড মিলিশিয়ারা বন্ধুকবাজিতে কিডন্যাপ করে সেইশাকে। তারা তাকে স্বপ্নে জলের উৎস খুঁজে দিতে বলে। দিনের পর দিন কেটে যায়, তাঁবুতে বন্দী, কিন্তু মেয়েটি স্বপ্নে পায় না নতুন কোনো নহরের ইশারা। জানজাইডরা অধৈর্য হয়। তাদের পানির প্রয়োজন বাড়ছে, দিন কে দিন তীব্র হচ্ছে জলের নিদান। অবশেষে তারা সেইশাকে উটে চড়িয়ে এক মরূদ্যানে নিয়ে গিয়ে অন্য একটি গোত্রের কাছ থেকে তার বিনিময়ে কিনে নেয় তেইশটি মশকভর্তি সুপেয় পানি।

কবি সরণীর শ্যামোল আঙিনা
চিলতে বারান্দায় হ্যামোক

প্রথম চ্যাপ্টারে একটি কাহিনির চমৎকার ইশারা থাকলেও পরের চ্যাপ্টারে তা পল্লবিত হয়নি। নহরের স্বপ্নের সঙ্গে কিংবা সেইশার বিনিময়ে পানীয় জল সংগ্রহের সঙ্গে কোনো লিংক না রেখেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়। এখানে রচনা ভঙ্গিতে এসেছে অনেকটা প্রবন্ধের আদল। দারফুরের সয়েল স্ট্রাকচার ও আবহাওয়া সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য রেফারেন্সসহ পেশ করে তিনি সবিস্তারে ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রজুড়ে দিয়ে আলোচনা করেছেন অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত ভূগর্ভস্থ জলের বিপুল রিজার্ভার নিয়ে। এই আবিষ্কার সম্পর্কে মিডিয়ার কল্যাণে আমিও অবগত। নাসার স্যাটেলাইট ইমেজারিতে ধরা পড়েছে, দারফুরের ভূগর্ভে বিশাল একটি ফসিল লেকের অস্তিত্ব। এ সরোবরকে বারবার ‘হিউজ এনসিয়েন্ট লেক’ হিসেবে বোল্ড ও আন্ডার লাইন করে তিনি নানা কিসিমের টেকনিক্যাল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পেশ করেছেন, আরও কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ান। অসংখ্য বছর আগে প্রকৃতিক কোনো কারণে জীবাশ্ম হয়ে ওঠা এ হ্রদের আয়তন ৩০ হাজার ৭৫০ স্কোয়ার কিলোমিটার। তার অবস্থান ভূগর্ভে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৫০ মিটার নিচে। অতঃপর তিনি বেশ গুছিয়ে যুক্তিতর্ক দিয়ে আলোচনা করেছেন, দারফুরের মূল সমস্যা হচ্ছে জলের অপ্রতুলতা। মরুভূমির তলায় চাপা পড়ে থাকা সরোবরের জল উত্তোলন করতে পারলে তাবৎ দ্বন্ধ-বিবাদের ফয়সালা হবে। এ অঞ্চলে শান্তির ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তা বেশ, এ প্রত্যাশা নিঃসন্দেহে উত্তম।

আঙিনার রাইটিং স্পেস থেকে মিউজিকের শব্দ ভেসে আসছে। লেখক অ্যান্থনি মেনডোঝার সম্ভবত প্রেরণার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তিনি লিখতে বসে উৎকট সংগীত বাজাচ্ছেন, ঘাড়-মাথা দুলিয়ে লা-লা-লা করে গেয়ে ওঠেন কিছু। সেইশার দিনযাপনের কষ্ট ও তার স্বপ্নের সঙ্গে আবিষ্কৃত সরোবরের বিনি সুতোর মালা গাঁথতে না পারলে শুধু লা-লা করলে তো বেস্টসেলার হবে না। প্রথম অধ্যায়ের সঙ্গে দ্বিতীয় অধ্যায়ের রীতি-পদ্ধতি এতটাই ভিন্ন যে, প্রকরণের এই গুরুচণ্ডালিতে প্রকাশক তো তুষ্ট হবেন না, আর তা পাঠকদের দরবারে পৌঁছালে তাঁরাও রুষ্ট হবেন অবধারিতভাবে। বিষয়টি কি অ্যান্থনিকে বলব? লেখক পরিচয় দিয়ে আমি কবিদের সরণিতে পনেরো শতাংশ কমিশনে কম ভাড়ায় বসবাস করছি। স্ট্রেইটকাট সমালোচনা করলে তিনি না আবার আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন!