ফররুখ আহমেদ

বাংলা সাহিত্যে আধুনিক ভাবধারার যে কয়েকজন মৌলিক কবি আছেন যাদের সৃষ্টিশীলতা মৌলিক বলে সর্বজন স্বীকৃত তন্মদ্ধে অন্যতম হলেন বাংলা রেনেসাঁর কবি এবং অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের জনক কবি ফররুখ আহমদ। কবি ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ সালের ১০ ই জুন, তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত বর্তমান মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ পরিবারে। তার পিতা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর এবং মায়ের নাম ছিলো রওশন আক্তার। ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর কবি ফররুখ আহমদ শেষ নিঃশাষ ত্যাগ করেন।

বাংলার রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ ঈদ নিয়ে অনেক লিখেছেন। তিনি পুরো দুনিয়াটাকে ঈদগাহ্‌র সাথে তুলনা করে ‘ঈদগাহ হবে দুনিয়াটাই’ কবিতায় লিখেছেন-
“আজকে এল খুশীর দিন
দেখ না চেয়ে খুশীর চিন
দেখ না চেয়ে আজ
রঙিন খুশীর ঝলক ঈদগাহে ।
জামাত ছেড়ে থাকবে যে ঘরের কোণে
রইবে সে রইবে হয়ে একপেশে
একলা থাকায় দুঃখ তাই ।
সবাই মিলে একদলে
এক আশাতে যাই চলে
এক আশাতে যাই বলে
ঈদগাহ হবে দুনিয়াটাই “।

খুশির দিনে সবাই মিলে একসাথে ঈদগাহে যাওয়ার যে আনন্দ সেটাই উপভোগ করার আহব্বান করেছেন কবির কবিতায় । এই ঈদের দিনে সুখ দুঃখ ভুলে ধনী গরীব ছুটে যায় ঈদগাহের দিকে । তাই কবি পুরো দুনিয়াটাকেই ঈদগাহ বলেছেন ।

কবি ফররুখ আহমদ আরো লিখেছেন ঈদ নিয়ে এভাবে—
‘আকাশের বাঁক ঘুরে চাঁদ এল ছবির মতন
নতুন কিশতি বুঝি এল ঘুরে অজানা সাগর
নাবিকের শ্রান্ত মনে পৃথিবী কি পাঠালো খবর
আজ এ স্বপ্নের মধ্যে রাঙা মেঘ হল ঘনবন।’

মুসলিম জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ সাম্যের গানকে একটু ভিন্নরূপে চিত্রিত করেছেন। সামাজিক লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অসাম্যের গ্লানি দূরে ঠেলে দিয়ে এক নির্মল প্রশান্তির পৃথিবী কামনা করেছেন তাঁর ‘ঈদের কবিতা’য়।

কবির ভাষায়-
“আজ ঈদগাহে নেমেছে নতুন দিন
চিত্তের ধনে সকলে বিত্তবান,
বড় ছোট নাই, ভেদাভেদ নাই কোন;
সকলে সমান- সকলে মহীয়ান”।