কাহলিল জিবরান

প্রার্থনা বিষয়ে

তোমরা প্রার্থনা কর তোমাদের আপত কালে তোমাদের প্রয়োজনেই
তোমরা প্রার্থনা করবে তোমাদের চরম আনন্দসুখ ও সমৃদ্ধির কালেও (তোমাদের অপ্রয়োজনেই)

প্রার্থনা আর কী-ই বা ঐশী আকাশের অন্তরীতায় তোমাদের আত্মসত্তার সপ্রসারণ ছাড়া
মহাশূন্য নভোলোকে আঁধারের বৈবর্ণ ঢেলে দেওয়াই যদি তোমাদের ব্যারামের আরাম হয় তবে আনন্দসুখের জন্য তোমাদের হৃদয়ের প্রত্যূষ ঢেলে দিয়েও তোমরা হও (আত্মহারা)
যখন অন্তরাত্মার প্রার্থনার ডাকে না কেঁদে থাকতে পারো তখন অন্তরাত্মা তোমাদের তাড়িত করবে বারংবার যতণ না কাঁদতে কাঁদতে তোমরা হেসে ওঠ পুনর্বার।
যখন তোমরা প্রার্থনা কর তখন তোমরা সেই মুহূর্তে প্রার্থনারত বাতাসে মিলিত হও, প্রার্থনা ভিন্ন তোমরা মিলিত হ’তে পারো না তার সন্নিবেশে
দৃষ্টির অগোচর ওই উপাসনালয়ে তোমাদের পরিদর্শন হোক্ মধুর সান্নিধ্য আর আনন্দ আবেশে
প্রার্থনা ভিন্ন তোমরা পাবে না কিছুই সেই উপাসনালয়ে প্রবেশে
আর নিজেদেরকে অবনমিত করতে যদি তোমরা সেখানে প্রবেশ কর তবে তোমরা উত্তরিত হবে না যেমন
অন্যের মঙ্গল যাঞ্চার উদ্দেশ্যে যদি তোমরা সেখানে প্রবেশ কর তবে তা অশ্র“তই থেকে যাব তেমন
তোমরা যদি উপাসনালয়ে প্রবেশ করতেই চাও একান্ত
তবে প্রবেশ কর অল্য অগোচরে, সেটাই হবে একান্ত সঙ্গত।

(প্রার্থনার ভাষা নাই), কী বলে প্রার্থনা করবে তোমরা তা আমি তোমাদের বলতে পারি না
ঈশ্বর যখন নিজেই তোমাদের ওষ্ঠে কথা বলেন, ঈশ্বর তিনি তোমাদের কোন কথা শোনেন না
তোমাদের কী করে শেখাই আমি জলে জঙ্গলে পর্ব্বতে প্রার্থনার বাণী
জলে জঙ্গলে পর্ব্বতের জন্মজাতক যারা তোমরা, তোমরা নিজেরাই নিজেদের অন্তরাত্মায় প্রার্থনার ভাষা খুঁজে পেতে পারো প্রার্থনার সেই প্রার্থিত বাণী
তোমরা যদি নিশীথরাত্রির মগ্নমৌন মুখরতা শ্রবণ কর তবে
তাদের নীরবতায় শুনতে পাবে :
”আমাদের ঈশ্বর তুমি আমাদের অন্তরীচারী সত্তা, তোমার অভিপ্রায়ই আমাদের অভিপ্রেত
”তোমার আকাঙ্খাতেই আমরা আকাঙ্খিত
”তোমার ইচ্ছাতেই আমাদের নিশীথরাত্রি দিবসসূর্য্যে আলোকিত, সে সবকিছুই তোমারই
”তোমার কাছে আমরা কী প্রার্থনাই বা জানাবো, আমাদের মধ্যে সঞ্জাত হওয়ার পূর্ব্বেই আমাদের সব অভিলাষ তোমার জানা হ’য়ে যায় এমনই
”তুমিই আমাদের (প্রার্থনা) প্রয়োজন, তুমি আমাদের আরও বেশী কিছু দিয়ে তোমার সবকিছু বিলিয়ে দাও আমাদের, (তোমার যা সব সবই তোমারই)।