কাজী নজরুল ইসলাম

ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম

‘ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী গান, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ এর নেপথ্য ঘটনায়। ১৯৩১ সাল। তখনো রমজানের রোজা শুরু হয়নি। তবে মাসিক মোহাম্মদী’র ঈদ সংখ্যা প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। একদিন বিকেল চারটার দিকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এলেন মোহাম্মদী’র সম্পাদক মওলানা আকরম খাঁর কাছে কোলকাতার অফিসে। এসেই বললেন, চার আনা পয়সা দেন চাচা দুপুরে খাইনি। পকেটে হাত দিয়ে একটা সিকি বের করে দিয়ে মওলানা আকরম খাঁ বললেন, এই নাও চার আনা পয়সা, বাইরে থেকে খেয়ে এসো। তারপর একটা কবিতা দিয়ে যাবে মাসিক মোহাম্মদী’র ঈদ সংখ্যার জন্য। খেতে গেলেন না নজরুল। কলম হাতে নিয়ে লিখতে বসে গেলেন। আধ ঘন্টার মধ্যে লেখা শেষ করে মওলানা আকরম খাঁর হাতে খাতাটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন- কবিতাটি পড়েন চাচা, আমি খেয়ে আসি। এটাই সেই বিখ্যাত কবিতা, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

লেখার চারদিন পর কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের গলায় গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের আগে এই রেকর্ড প্রকাশ হয়। গ্রামফোন কোম্পানি এই রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ডের অপর গানটি ছিল নজরুলেরই লেখা ‘ইসলামের ওই সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর/ বদনসীন আয়, আয় গুনাহগার নতুন করে সওদা কর’। (সূত্র- ফকির আশরাফ, কত কথা কত স্মৃতি, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৫। এসব হলো ইতিহাস কিন্তু কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর গান লেখার পূর্বে এই মুসলিম জাতি কিভাবে ঈদ অতিবাহিত করতেন, কেমন ছিলো আমাদের ঈদ উৎসবের আদিতম অবস্থা বা কেমন ছিলো আমাদের সমাজ ব্যবস্থা? বর্তমান সময়ে এসেও আমাদের ঈদের সংস্কৃতি কি এগিয়েছে? আমাদের এখনকার ঈদ উৎসবের সময় এখনকার কবি লেখকেরা কি আর ঈদ নিয়ে গান বা গজল লিখছে না, লিখলে এই গানগুলো কেমন এসব আমি পাঠককুলের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই উপমহাদেশে তাঁর গানে মুসলমানদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে তুলে ধরেছেন সাম্যের আঙ্গিকে। তাঁর এই গান উঁচু নিচু ভেদাভেদ ভুলে সকল মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করানোর প্রবল অভিপ্রায় এবং শোষণ-বঞ্চনা নিঃশেষ করে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হয়েছে।

ঈদের গান
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই গরিব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
ঢাল হৃদয়ের তশতরীতে শিরনি তৌহিদের,
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উম্মীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
তোরে মারল’ ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।