কবি সিদ্দিকা লাকীর পঙক্তিমালা

সিদ্দিকা লাকী
তোর এই শহরে

তোর এই শহরে বাঁচি বল  কি করে
এতো আলোয় এতো আধাঁরে।
তুই থেকেও যে নেই
তোকে বলার কিছু নেই
কেন হয় রে এমন
কেন হৃদয় ভাঙ্গন।

কেন যে মানুষ ভালোবাসে
কাছে পেয়েও হারায় শেষে
কেন মিথ্যের চাষাবাদ
কেন শুধুই অপবাদ।

পাথর জমিন এ বুকে আমার
আর কত জমিয়ে রাখবো হাহাকার
খেলায় খেলায় মেতে থেকে
অবহেলায় বসবাস।

তোর শহরে রাত্রি নামে
আমার জমিনে বর্ষণসন্ধ্যা
হয় না দেখা হয় না কথা
বদলায় না যে ভাগ্যরেখা।

তোর নামে কত শপথ নিলাম
শূন্যের টানে আমি মিলিয়ে গেলাম
তুই অভিমান করে
সত্যের সাথে দিলি আড়ি
জমাট ব্যাথা বুকে নিয়ে
কিভাবে দেব এতটা পথ পাড়ি

তোর সাথে স্মৃতির রেখা
দিগন্তের মতো ঝাপসা হয়ে আসে
তোর এই শহরে
চেনা পথও আজ অচিন লাগে
ভীড়ের মাঝেও জানিস তুই
বুকের মাঝে একলা লাগে।

তোর এই শহরে
অলিগলি আর ফুটপাথে
আমার আল্পনাগুলো
কারা যেন দুপায়ে মাড়িয়ে বেড়ায়।
বুনোফুল আমায় মনে করিয়ে দেয়
তোর খোপায় গোঁজার দিনগুলো
জানি তোরই মতো করে
আর ফিরবে না সে দিনগুলো
শুধু আমিই রইবো একা
তোর এই শহরে
এতটা আলোয়

 

ঝুলন্ত প্রেম

ঝুলন্ত প্রেম ভাঙ্গা মনোরথ
এসবের মানে কি তুমি বোঝ?
সন্ধ্যেবেলার পুব আকাশে
আনমনে কি খোঁজ?

যাকে ভালোবাসো
যেভাবে ভালোবাসো
যে তোমায় ভালোবাসে
পুবের আকাশে তোমায় খুঁজে
খুব কি টের পাও তুমি?

নাহ, একেবারেই তুমি সেরকম নও তো,
বারের সাঁঝবাতি দারুন বুঁদ করে রাখে তোমায়
মন উবে যায় রঙ্গিন নেশায়
মেতে থাক তুমি অভেদ তাড়নায়।

জীবন থেকে অনেক দূরে তোমার বসবাস
ভালমন্দ রীতিনীতি করেছো উপহাস,
ভাবনি তো কখনও
জীবন শুধু জীবনের জন্য।

ছাড়ো এসব রাখো পাগলামি
কাছের মানুষকে কাছে টানো
মনের ঘরে সুখ আনো
আর দেহের জন্য
রাজ্যের প্রশান্তি।

দোটানার জীবন কোন জীবন নয়
ভাঙ্গা মনোরথ নিয়েই জেনো
ঘুরে দাঁড়াতে হয়।

একদিন ফুরিয়ে যাবো

একদিন ফুরিয়ে যাবো
আমি তুমি আমরা সবাই,
টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি
দেবে না তো হায় কোন রেহাই।

ফুরিয়ে যাবো নিভু নিভু প্রদীপের মতো
উবে যাবো কর্পুরের দানার মতো,
তাই তো মনকে প্রশ্ন করি
কিসের অহংকার করো এতো?

ফুরিয়ে যাবো অতীতের সব স্মৃতি ভুলে
ডুবে যাবো ভবিষ্যতের অজানা আধার কোলে।

তুমি রবে না, আমি রবো না
রয়ে যাবে শুধু-
এপারের খেয়ায় ভেসে থাকা
ভালো আর মন্দের তফাত কাজগুলো।

ভেজা দাড়কাক সে ও রবে না
মৃদু মন্দ দখিনা বাতাস
সে ও রবে না।

প্রিয়তমের প্রথম চুমোর অনুভব
সেও একদিন ঝাপসা  হয়ে যাবে
মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে টেনে নিয়ে-
‘কেমন আছিস’ বলা সেই চেনা মিতালি কণ্ঠ
বড় অচেনা মনে হবে যেন।

আমার আমি, তোমার তুমি
হিসেবের খাতা কল্পনা বিলাসী
কী পেরেছি, কী পারি নি
এই নিয়ে চলে শুধু টানাটানি।

আবেগ অনাবেগ পিছুটান টানাপোড়েন
এসব অদ্ভুত গল্পের হাতছানিও একদিন
শেষ হয়ে যাবে।

যদি নাই বা রইলাম
এ নশ্বর পৃথিবীতে অমরত্বের স্বাদ নিয়ে
তবে কেন মিছে মায়ার এ সংসারে
রোজ বেড়াই স্বপ্নের তরী বেয়ে?

ফুরিয়ে যাবার আগেই চলো
মানুষ হবার প্রাণপণ
আমৃত্যু লড়াই করি।

ফুরিয়ে যাবো কোন একদিন
মিশে যাবো অলীক কল্পনার মত
নিঃসীমের তরে চিরতরে।

মন খারাপের কথন
তোমাকে ফেরাবার পথ জানা ছিল না
বুঝিনি আমিও পৌঁছে গিয়েছিলাম চোরাগলিতে,
কতটা ভালোবাসলেই তবে অভিমান করা যায়
শিখতে পারিনি তোমার কাছে থেকেও,

আজ তুমিহীন শুন্যবেলায়
গুনতে বসেছি হেরে যাবার খেলায়
হিসেব কষেছি ভুলের বাটখারায়,
আর বুকপকেটে শুধুই জমে আছে
কান্নার হুতাশ।

ভালোবাসাও কি তবে প্রান্তিক উপযোগিতার মত
আবেদনহীনতায় ভোগে?
সুখের অসুখে তাই বুঝি মানুষ
কিসের ইশারা জানি খোঁজে।

মৌনতায় নিষ্প্রাণ হয়ে আসে
বুকে জমে থাকা ঢেউগুলো
চেয়ে দেখি তোমার ফেলে যাওয়া স্মৃতিগুলোও
খেয়ে নিয়েছে সব জমে থাকা ধুলো।

তোমার ফেরার আশা আমায় যোগ করেছে হতাশা
প্রেম অপ্রেমের কাব্যজুড়ে শুধু আমার যাওয়া-আসা,
আমি গান গাই
আমি কবিতা লিখি
এক একটা কষ্ট বুক থেকে সরিয়ে
সাগরে পাথর ছুঁড়ে বালির তামাশা দেখি।

পাখিরা নীড়ে ফিরে যায়
আমি মগ্ন থাকি কিসের নেশায়,
ধোঁয়ায় ভরা পেট আর একলা খালি মনে,
আমি বুঝে গেছি ভালো করেই
আমাকে বুঝি তোমার আর
ভালোবাসতে নেই।

নাই বা তুমি বাসলে ভালো
জীবন আমার আধার কালো,
যে পথে হারিয়েছো তুমি
থেকো সেই পথেই ভালো।

ও প্রিয়
তবুও তুমি থেকো ভালো।

স্বপ্নেই এমন হয়

মাঝরাত জাগা চাঁদ আমাকে এতোটা আকুল করছে কেন?
আমার বলা না বলা কথাগুলোর সাথে ওর অদ্ভুত রকমের মিল আছে।
বিশ্বাস করলে না বুঝি?
জেনে নিও-
স্বপ্নেই এমন হয়।

তোমাদের ঘুমন্ত শহরে আমি বেমানান
নিশাচর অশান্ত মনের অসীম পিপাসায়
ব্যথাতুর কান্নার গোঙানি তোমাদের কানে জানি
পৌঁছে না ঠিকমত।
আচ্ছা এমন অর্থহীন জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়িয়ে
কেউ বেঁচে থাকতে পারে?
তোমাদের পাহাড় সমান অনুভুতি,আসমান সমান ব্যস্ততা
নির্জন বনভুমির ছটফটানি,সমুদ্রের বিশালতার বিশুদ্ধ ছোঁয়া
এসবই আমার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হয়।
তোমাদের আমাদের তফাত কি এতটাই অসামান্য
তোমাদের আমাদের মৌনতা কি এতটাই নগন্য?
কেন পারছি না সব ভুলে জ্বলে উঠতে
জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাক আমাদের  অপরাপর সব
আলাপন, যন্ত্রনা,ভালোবাসা।
একটা  জীবন যদি এভাবেই নিপাত যায় যাক না
পাওয়ার তৃপ্তিতে বুঝি হারানোর বেদনা হার মানে,
তুমি ভাবছো আমি আনমনা হলেই এমন ভাবি
সত্যি বলছি
মন মনন শরীর আত্মা সবটুকু নিয়ে বলছি,
চেনা গান আজ বেজে উঠুক অচেনা সুরে
তোমাদের মনজুড়ে নামুক উম্মাদনার বন্যা,
ভাঙনের স্বাদ নিতে নিতে আমি হবো বিলীন
আর আমাকে বুঝি তোমরা
মনে রাখবে না কোনদিন।

বাঁচাও বিধাতা

বাঁচাও বিধাতা
বাঁচাও তোমার বান্দা
কাঁদছে ধরণী
কাঁদছে মানবতা।

তোমার উছিলা তুমিই জানো
মাবুদ,পাপী বান্দা আমি
তোমার ক্ষমতার বরাবর বেখবর দিবসযামী।

এসেছে গজব
পড়েছে আজাব,
ভালো নেই প্রাণীকূল আশরাফুল মাখলুকাত।

তুমি প্রভু, তুমি মহান,
তুমিই পারো একমাত্র
দিতে মুক্তির সন্ধান।

দুনিয়াদারি করতে গিয়ে
তোমায় গিয়েছিলাম ভুলে
পেছনে ফিরে দেখি
তরী নেই কোন কূলে।

ইয়া রহিম, ইয়া রহমান-
তোমার রহমতের বন্যায় আজ
করতে চাই স্নান।

বাঁচাও বিধাতা
ফকির মিসকিন গরীব দুখী মেহনতি অসহায়
ধনী উন্নত অবনত আজ
সবই যেন এক কাতারে দণ্ডায়মান।

বাঁচাও  বিধাতা, করো  ক্ষমা
তোমার করুণায় সিক্ত হতে
হাজার মাইল পথ পাড়ি দেবার মতো
রয়েছে জমা।

মৃত্যু  আসবেই, মৃত্যু চিরন্তন
ভাগ্যের লিখন জানি যায় না খণ্ডন।

বাঁচাও বিধাতা আকুল আবেদন
শুধরে নেব ভুলগুলো
গড়বো নতুন জীবন।

তোমার ধ্যানে জীবন ব্যয় করতে
ধন মান জ্ঞান  সব ত্যাজ্য করতে
শেষ সুযোগটুকু একবার দাও
হে বিধাতা
শুধু একবার
সুযোগ দাও।

আফ্রিকা এশিয়া ইউরোপ আমেরিকা
পারেনি থামাতে এ মহামারি
পারেনি নামাতে টিকা।

তোমার করুণা যদি নাই বা পেলাম
কিসের মানব জনম
আমি যে অধমই রয়ে গেলাম।

বাঁচাও বিধাতা, বাঁচাও প্রাণ
কোটি মানুষের আজ একটাই গান।
বাঁচাও বিধাতা
এ পৃথিবীকে করো পরিত্রাণ।

পাপের বদলে আমরা বেছে নেবো
পুণ্যের জয়গান
বদলে যাবো
এই মিনতির সুরে
তুমি রক্ষা করো বিধাতা

মানুষ অমানুষ বিশ্বাসী অবিশ্বাসী
সকল সুরাসুরে-
বাঁচাও বিধাতা বাঁচাও প্রাণ
পরম করুণাময়  হে দয়াবান।