কবি শ্যামলী বেগমের কবিতা

কবি শ্যামলী বেগমের কবিতা

পথ

নির্মাতা নির্মাণে নাহি করে ভুল
তবুও সেথায় জমে অবচেতনে ধুল
ছড়ায়ে চারপাশে বিশুদ্ধতার হাওয়া
তবুও বাঁচিবার তরে হাওয়া হয় চাওয়া।

মিথ্যা বিভীষিকায় চলে নিত্য ছুটে চলা
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির প্রতিযোগিতায়
চলে নিছক ছলা কলা
এভাবেই বহে যেথায় এই বিশ্ব সংসার
সুখ কি এতই উদার, শুধুই দিয়ে যাবে ধরা?

কেহ কাহারে হেথায় করে পরখ,
কেহ বা কাহারো তরে যাচে
কেহ বা আবার তাতেই মজে,
মুখের পরে, বুকের কথা
উঠলে উঠে পাছে
এই তো খেলা, সদাই চলে, কতজনের মাঝে
ভাবছ বুঝি জিতেই গেলে,
হারছে কেহ লাজে।
অবাক পৃথিবী ! বিদ্রোহে ভরা মন আর চিন্তনে
অবাধ্যতার স্রোতে ভাসে দেশ, করোনা উপাখ্যানে।

নিজেকে নিজেই পথহারা করে,
মিছে এক মোহ টানে
ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষম অপরাধ…
ক্ষমা চাই মনে প্রাণে

যত বারই করি ভুল
যত বারই হই পরাশ্রিত
ওগো জ্ঞানী, ওগো শক্তি
সদা তুমি বিরাজ সেথায়
সদা ধ্বনিত হও উদাত্ত মন্দ্রস্বরে
অশ্রু আওয়াজ সমর্পিত হোক
তাই তোমারই আকাশ তলে।

 

যাত্রা

জীবন তো এভাবেই ফুরিয়ে যায়
অনেক চাওয়ার এক ঝলকে
কোথাও না কি যেন এক চেতনা
যায় হারিয়ে!

হুম, জীবন এভাবেই ফুরিয়ে যায়۔۔۔

চলার ক্ষনে না বলা কথা
হঠাৎ কোন দমকা হাওয়ার তোড়ে
এক প্রান্তে এসে মিলিয়ে যায়।

জীবন নিয়ম۔۔ নয় , নিয়মেও জীবন
চলে না !
বহুদূর যাওয়ার আকাঙ্খায়
আপন۔ ঠিকানায় সাজানো স্বপ্নগুলো
নীরবে নিশীথে হঠাৎ করেই
কষ্টের ঠিকানায়
নিয়তির কাছে ফিরে যায়।

হুম জীবন এভাবেই ফুরিয়ে যায়۔۔۔

কখনো কখনো সুখের কাছে নিমন্ত্রণ
পেয়ে বসে দুঃখ
সময়ের কাঠগড়ায় প্রশ্ন জাগে ,
যত ভালো বাসা দিয়েছিলে এই ভুবনে
রঙের ধরায় যে রং লেগেছিলো
পালাবদলের প্রতিকূলতায় সব ক্ষয়ে
কেন ? পথ খোঁজা পথিকের ন্যায়
দিশা হারায়!
কেন দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে
আঁধারের যাত্রা হয় স্বতঃসিদ্ধ।

মৃত্তিকার মাঝে কোন এক সময়ের
রজনী কেন হারিয়ে যায়…

হুম, হয়তো জীবন এভাবেই ফুরিয়ে যায়!

 

ভিন্ন শহরে বৃষ্টি

ফেরারি মন ভিন্ন শহরে রিনিঝিনি প্রিয়
শব্দ কলির নেশায় মত্ত ,বৃষ্টি খোঁজে
এই শহরও ভাসতে জানে , ভাসাতে জানে।

মেঘে মেঘে মধুর বিবাদ , হৃদয় দরজায় কড়া নাড়ে
আত্মহারা মন, মায়াবী রাতে জলপতনের শব্দে
ধুয়ে ফেলতে চায় দুঃখের নকল সমীকরণ।

ভিন্ন শহরেও যৌবনা বর্ষা, প্রকৃতির কাছে সব
দেনা পাওনার হিসেব খুঁজে ফেরে,
ভিন্ন শহরেও নোনা জলে ভেজা চোখ
আজও ঝুম বৃষ্টির স্থিরপ্রহরের স্পর্শ চেয়ে বসে ।

এই শহরেও উদভ্রান্ত মেঘ,
সমস্ত আকাশ তন্ন তন্ন করে খোঁজে
ভালোবাসার এক ফোঁটা জল।

এখানেও চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়িয়ে
ভরো ভরো মনগঙ্গায়
কেউ একজনা নিজ শহুরে
মেঘের স্রোতে ভেসে যাওয়া
জল প্লাবনের গোপন কবিতা লেখে।

 

বৃষ্টি ও কবি

ওগো ঝড় ওগো বোশেখি
তোমার রূপেই কেন আমি
আমায় দেখি۔۔۔
সেই মাটির আদিম নেশার ঘ্রাণ
সেই বৃষ্টি- ছোয়া প্রাণ
ঝরছে ঝরুক আশায়
আজ ও উদাস পানে থাকি।

গরজে গরজে ছুটছে মেঘ,
বিষম দারুন হাওয়া
নদী পাতা জলে যেন
চোখ ছবিটি আঁকি
বৃষ্টিমুখর কোন মেঘহরিণী রে
কবিতায় আজ বাঁধি।

যে ঝড়েতে মেঘ ভেসে যায়
উদার প্রেমের মতন-
যে মেঘেতে হৃদয় শহর
ভেজে যখন তখন۔۔۔
সেই ঝড় বিলাসী আবেদনে
শেষ কি হবে
বৃষ্টি প্রেমেগাঁথা নীরব আলাপন।