কবি মুসফিকুর রহমানের কবিতা

কবি মুসফিকুর রহমানের কবিতা

বেলা শেষে

বেলা শেষে বয়সী বট বৃক্ষটা রাতের কুলে
এলিয়ে দেয় ক্লান্ত, শ্রান্ত দেহ, অবসন্ন মন,
আঁধারের গহীন অতলে খুঁজে ফিরে আশ্রয়
চারদিকে শুনশান নীরবতা, অজানা দূর হতে
ভেসে আসে নিঃসঙ্গতার গোঙ্গানো চাপা কান্না;
বহুদূর পথ হেঁটে আসা ক্লান্ত পথিক এ বটতলে
খুঁজে না ছায়া, জুড়োয় না দেহ চৈত্রের দাহে,
বেলা অবেলায় বাজে না রাখালের মোহন
বাঁশি এ বুড়ো বটমূলে বহুদিন হয়েছে গত,
অভিমানে শাখায় শাখায় জমেছে বিরহ কতো;
দিন যায় রাত যায় একাকি দাড়িয়ে হায়
হিসাবের খাতাটা উল্টে বেড়ায় – যৌবনের
সারথীরা বসতি করেছে আজ কোথায়?
অতিথি পাখিরা উষ্ণতা খুঁজে না পত্র পল্লবে
শুষ্ক ঠোঁটে নিশুতিরাতে মৌনতার আহ্বানে,
ব্যস্ত সবাই ব্যস্ত, আয়োজন করে সমস্ত
জীবনের মহাসড়কে ছুটছে দিয়ে পাল্লা
কে আপন কে বা পর, কেউ কারো রাখে না খবর,
ঐ বুড়ো বটগাছটা বেলা শেষে খুলে দেখে
হিসাবের খাতা; একাকিত্বে ভরা জীবন হালখাতা।

 

 

তোমার জন্য

তুমি একটা কবিতা লিখতে বলেছিলে
ঠিক আবদার নয়, দাবীর মতন করে একটা কবিতা
চেয়েছিলে, তোমাকে নিয়ে নাকি তোমার জন্য
এ প্রশ্ন নিতান্তই অহেতুক,
একটা কবিতাইতো, তোমার জন্য; না হয় তোমাকে নিয়ে
এ অভাগা কবি কত বিনিদ্র রজনী জেগে
কবিতার অবয়ব গঠন করেছে
কল্পনার তুলিতে এঁকেছে কবিতার মুখ
কত রাত জেগে আকাশে বিছানো শুঁকনো তারার ফুল
এনে মালা গেঁথেছে, ছন্দের মালা;
স্থির নদীর বক্ষ থেকে এনেছে ঢলঢলে যৌবন
সান্ধ্য জোনাকির ঝিঁঝি শব্দ কেঁড়ে এনেছে সুর
ভোরের কুয়াশার জল জমিয়ে ধুয়েছে কবিতার মুখ
কাঠ ফাটা রোদে বুড়ো বটতলে বসে
ধূ ধূ মাঠের প্রান্তর থেকে এনেছে লো হাওয়া,
বিকালের সোনা রোদ মাখাতে চেয়েছে কবিতার অঙ্গে
বহু অভিধান উল্টে পাল্টে যুতসই শব্দ খুঁজেছে
কিছুই হয়নি কবিতার,
গোধূলীর আলোয় দেখেছে তোমার মুখ,
তুমিতো কবিতার চেয়েও সুন্দর
তুমি যে কবিতার প্রতিরূপ,
তোমার জন্য কিংবা তোমাকে নিয়ে
কবিতা লেখার সাধ্যি আমার কই!
আর, আমি মামুলি এক অখ্যাত কবি মাত্র।

 

চেনা হলো না

পতঙ্গভুক জলজ হয়ে একদিন এসে
সমস্ত ঘ্রাণ দিয়ে কাছে টেনে
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে
সমগ্র রস শুষে নিয়ে
কোন অজানা দ্বীপে আলোর প্রদীপ জ্বেলেছো
জানা হলো না- তুমি আজ খুব অচেনা।
ভাবছো ভুলে গেছি! না ভুলে যাই নি
ভুলে থাকি, তোমাকে নয়, কেবলই
স্মৃতিগুলো মন্থন করি
আজও তোমায় ঠিক চেনা হলো না।