শাহ্জাহান কবীরের কবিতা ‘ক্রিপ্টো-কমিউনিস্ট’

শা হ্ জা হা ন  ক বী র
ক্রিপ্টো-কমিউনিস্ট

তিনি এলেন শশব্যস্ততার সাথে
আমন্ত্রিত অতিথিকে বসালেন
তার অফিসের সস্তা ঘুণেধরা চেয়ারে।
নিজেও বসলেন তেমন একটি চেয়ারে।
সামনে রাখা টেবিলটিও ক্ষুধা-পীড়িত
মানুষের মত জীর্ণ ও দীর্ণ।
শ্লোগানে ও মুক্তির লাল বাণীতে
অফিসের দেয়াল জরাগ্রস্ত।
মাথার উপরে টাঙ্গানো মার্ক্সের চিন্তিত ছবি
বিমূঢ় লেনিনের দিকে চেয়ে আছে।

তিনি বললেন মানুষের সাম্যের কথা, মানুষের মুক্তির কথা
তিনি বললেন মেহনতি জনের শ্রম চুরির প্রাগৈতিহাসিক কাহিনী।
হাল আমলের পুঁজিবাদ, কর্পোরেটতন্ত্র আর বিশ্বায়নের দেহের কাপড়
সজোরে টান মেরে খুলে দিলেন।
মুক্তির অনিবার্ন শিখা দাউ দাউ করে উঠে তার আশা-স্ফীত বক্ষে
ঝলসে উঠা চোখে স্বপ্নের ধূমকেতু তাকে অস্থির করে তোলে।
মরা স্বপ্নের পিঠে লাথি মেরে
অকস্মাৎ তর্জনী উর্ধ্বে উঠে এলো।
কণ্ঠ ভরে গেলো “দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই কর” শব্দজলে।

বিস্মিত অতিথি, মহাব্যস্ত তিনি
স্বপ্নে বিভোর তিনি। তার চায় একনায়কতন্ত্র
শ্রমিকের একনায়কতন্ত্র! তবেই মুক্তি, তবেই সাম্য।

আলাপের মাঝে অফিসের সহকারীকে
চা দেওয়ার আদেশ দিলেন।
ঘরোয়া কাপের অর্ধেক চা এলো, সাথে দু টুকরো বিস্কিট।
মহৎ কৃচ্ছ্রতা! এটাই নিয়ম এ অফিসের।
শুনে মনে পূণ্য এলো।
উচ্চ ভাবনায় সরল যাপন- অতিথির মাথা নত হয়ে আসে।

হঠাৎ রক মিউজিক রিংটনে সাম্প্রতিক সংস্করণের অ্যাপল ফোন বেঁজে উঠলো।
তিনি উঠলেন। অনেক কাজ, অনেক সভা, বিবিধ সমাবেশ…
অফিস হতে নিচে এলেন নেমে।
একটি দামী ব্রান্ডের কার এলো তার পাশে, খুলে গেল তার মুঘল দরজা।
তিনি উঠলেন, হাত নাড়লেন। সত্যি, অনেক ব্যস্ত তিনি।

অতিথি স্তব্ধ,
মনে হলো প্রকাণ্ড এক কুয়োর কিনারে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন।