::নিজস্ব প্রতিবেদক::
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শতবর্ষে পর্দাপন করেছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে ঢাবি ক্যাম্পাস হওয়ার কথা ছিল আনন্দে মুখরিত। করোনাকালে সেটা সম্ভব না হলেও শতভাগ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে অনলাইনে প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ডস অ্যালাইয়েন্স (ডিইউএফএ)। ডুফা নামে অধিক পরিচিত সংগঠনের বন্ধুদের এই আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও উন্নয়নে নানামুখী প্রস্তাব উঠে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনটির শতাধিক বন্ধু। মার্কেটিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে যশোর বেনাপোল কাস্টম হাউজের এডিশনাল কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলামের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনায় কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর শিক্ষক মনিরুর রশিদ। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাবি কী করছে- তা আলোকপাত করেন। বর্তমানে ঢাবিতে বিদেশি ছাত্র কেন কমে যাচ্ছে, ঢাবির শিক্ষক বিদেশে গিয়ে আর কি ফিরে আসছে? দেশে ফিরে এলেও অর্জিত জ্ঞান কি দেশে কাজে লাগাচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়কে কি আমরা ব্রান্ডিং করছি? ঢাবির ইন্টারন্যাশনাল লুক আছে কি না? মাল্টিকালচারাল লুক আছে কি না? শিক্ষক, ভিসি নিয়োগে ইন্টারন্যাশনাল মান আছে কি না- ইত্যাদি বিষয়ে গুরত্ব আরোপ করেন তিনি।
‘গবেষণায় পিছিয়ে পড়া’য় বিশ্ববিদ্যালয়টি র্যাংকিংয়ে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. নেয়ামুল এছাড়া দেশের বাইরে পড়ার অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাবিকে ডিজিটালাইজ করার উপর জোর দেন। স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ, ডিজিটাল লাইব্রেবি স্থাপন, যুগোপযোগী একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি, টিউশন লোন সিস্টেম চালুর কথাও বলেন তিনি।
এস এম সুমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো প্রাণবন্ত করার উপর জোর দেন। জাহিদ কবির টিটু বলেন, ঢাবির ছাত্র শুধু ক্যাম্পাসে নয়, বরং প্রত্যেকে যার যার এলাকাও একটা ব্রান্ড হিসাবে কাজ করে, তিনি ঢাবিতে সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা চালু ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার ওপর জোর দেন।
মনিরুজ্জামান খান বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন। এর মধ্যে রয়েছে, ‘কেন শিক্ষকরা এতো বেশি কমার্শিয়াল হয়ে যাচ্ছেন, কেন আমরা বর্তমানে জিসি দেবো, অমিয় চক্রবর্তী, কাজী মোতাহের হোসেন কিংবা ড.মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর মতো শিক্ষক পাচ্ছি না?’ কিছু আশার কথা শুনিয়ে মোহাম্মদ আযহার বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত ষাট একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে, যেখানে শুধুমাত্র গবেষণার কাজ হবে।’
আহম্মেদ বশির ও জেসমিন আক্তার ঢাবি ক্যাম্পাসকে আরো সুন্দর করার কথা বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় রেখে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। বিসিকের সচিব কবি মোস্তাক আহম্মেদ ঢাবির ছাত্রদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
গবেষক বায়েজিদ শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের শতবর্ষ পদার্পনে মহান পুরুষ ঢাবির প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদানকারী স্যার সলিমুল্লাহকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘যে বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতীর উন্মেষে ভূমিকা রাখে, সে প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে থাকতে পারে না।’ জুবায়ের আহসান ঢাবির ব্রান্ড মার্কেটিংয়ের ওপর জোর দেন।
ডুফা বন্ধু রাসেল ও ইশরাত জাহান শাহানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের উন্নয়নে ডুফার সম্মিলিত শক্তি কাজে লাগানোর কথা বলেন, হাসানুজ্জামান রাসেল একটি ডুফা হসপিটালের প্রস্তাবও রাখেন। ডুফা বন্ধু সাইদ স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণে সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্মেষে ঢাবির অবদানকে স্বীকার করেন আরেক বন্ধু সোহাগ।
হাসান মোহাম্মদ টিটু ও তুষার ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের বিভিন্ন নান্দনিক স্থাপত্যের কথা স্মরণ করেন। আবাসিক হলের ছারপোকা নিধন ও হলের পরিবেশ ভালো করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ফেনীর এসপি খন্দকার নুরুন্নবী ডুফার বন্ধুত্বের বন্ধন আরো দৃঢ় করে ঢাবির উন্নয়নে অবদান রাখার কথা বলেন। আবুল কালাম বলেন, ‘আধুনিক তথ্যসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠনে ঢাবিকে এগিয়ে আসতে হবে।’
নাহিদ সুলতানা এথিনা, এস এম সুমন, আশরাফুল ইসলাম আশা, উর্মি ফারুকী, আব্দুর সাত্তার গাজী, মঞ্জুর, ফারুক আহম্মেদ, আবু সালেহ, দুলাল, ফারাহ জহীর, কুইন, ব্যারিস্টার দীপা প্রমুখ সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। কবি শ্যামলী বেগম স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান।
কিছুদিন আগে মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হারানো ডুফা সভাপতি শোককে শক্তিতে পরিনত করে প্রায় আড়াই ঘণ্টার আড্ডার ইতি টানেন। এর আগে তিনি সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে দেশ, জাতি ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করে ।
আড্ডায় দর্শক হিসাবে অনেকের সাথে রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বন্ধুসহ যুক্তরাষ্ট্র; কানাডা; অস্ট্রেলিয়া; যুক্তরাজ্য; সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী বন্ধুরাও যুক্ত ছিলেন। আরও ছিলেন শিমুল, বদরুল হক অনু, শরিফা মনি, এ কে তালুকদার, আমিনুল ইসলাম আশিক,সম্পা সাদিয়া, আশরাফ আলী, সরোয়ার, আজিম সরদার, ফখরুদ্দীন চিশতী, লাভলু, মনির, মির্জা মিঠু, আফরোজা পারভিন, অহিদুজ্জামান সোহেল, আসমা সাইদ, তাসকিন তৌহিদ, সাইদ, মাহমুদুর রহমান, টিটু, রাসেল, জাহিদ, টগর, জুথি, নাহিদ হোসেন, বাকী বিল্লাহ, মিহির লাল, নাহিদ মুকুল, আশা, আসলাম হোসেন, হাসিফ সওদাগর, আহম্মেদ মুন্নি, পাপ্পু, সুস্মিতা, শেখ গফুর, খায়ের দোহা, তারিক পাপ্পু, হামিদুল ইসলাম, জোবেদ হোসেন, চামেলি নারগিস, মঞ্জু, কাজী আব্দুল হক, আব্দুস সাত্তার গাজী, লুনা খান, বিবেক পল, কামরুল হাসান, সানজিদা খান রিপা, ফেরদৌসি রেজা, সামসুন নাহার, মামুন আজাদ প্রমুখ বন্ধুরা।