কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের পর্বটি আমি কখনো ভুলবো না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হলেও মনপ্রাণ পড়েছিল ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে। কারণ সেখানে ছিলেন দুই বাংলার সেরা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। একদিন দুরুদুরু বুকে, হাতে ইত্তেফাকের সাহিত্যসাময়িকীতে সদ্য প্রকাশিত আমার একটি কবিতা নিয়ে, ভোরবেলা স্যারকে তাঁর কক্ষে একা পেয়ে ‘মে আই কাম ইন, স্যার’ বলে অনুমতির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলাম। অনুমতি মিললে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। স্যারের হাতে ইত্তেফাকে প্রকাশিত কবিতাটি তুলে দিয়ে বললাম, ‘স্যার, এটি আমার লেখা।’ ‘তাই নাকি?’ বলে স্যার লেখাটি তাঁর চোখের সামনে তুলে ধরলেন। পড়া শেষ করে ফিরে তাকালেন আমার দিকে। ‘বা:, বেশ ভালো লেখো তো তুমি!’ স্যারের মনোযোগ আরো আকর্ষণ করার জন্য আমি বললাম, ‘স্যার, আমার বাড়ি মনোজ বসুর গ্রামের পাশের গ্রামে।’ ‘তাই নাকি? ওঁনার গ্রামের নাম তো ডোঙ্গাঘাটা, না?’ ‘জি।’ স্যার বললেন, ‘মনোজ বসুকে কলকাতার লেখকরা কী বলত জানো?’ আমি অপারগতা প্রকাশ করলাম। ‘ মনোজ বসুকে ওঁরা মনোজ বোস না বলে বলত বনজ মোষ।’ বলে হা-হা করে একগাল হাসলেন তিনি। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। স্যার আবার বললেন, ‘তবে হলে কী হবে। অত্যন্ত উঁচু দরের গল্পকার ছিলেন মনোজ বসু, উপন্যাসিকও, স্বীকার করতে হবে সবাইকে।’
মূলত এর পরই আমি মনোজ বসুর (১৯০১-১৯৮৭) লেখা অন্বেষণ করতে শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে তাঁর একক কোনো বই পাইনি। তবে কয়েকটি সঙ্কলন পেয়ে যাই যেখানে মনোজ বসুর স্মৃতিকথা জাতীয় কয়েকটি লেখা ও দুই-একটা গল্প মেলে। রাজশাহীর কয়েকটি লাইব্রেরিতে তখন কলকাতার বই ও পত্রপত্রিকা পাওয়া যেতো। সেগুলোতে খুঁজলাম। একটি লাইব্রেরিতে পেয়ে গেলাম মনোজ বসুর বাছাই গল্প। কিনে ফেললাম এবং হলে ফিরে এসে পড়েও ফেললাম একদমে। সেটিই আমার পড়া মনোজ বসুর একক কোনো গ্রন্থ। বাছাই গল্পের ‘ধানবনের গান’ গল্পটি আমার ভেতর-বাহির দুমড়ে মুষড়ে দিয়ে যায় একেবারে। ধানক্ষেত নিয়ে এত সুন্দর গল্প লেখা যায়, এর আগে আমার জানা ছিল না। কবিতায় জসীমউদ্দীন যে কাজ করেছেন, এখানে মনোজ বসু সেই কাজ করেছেন তাঁর গল্পে। গ্রামবাংলার কি-অসাধারণ চিত্র, যেন গোটা বাংলাদেশকেই ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি শব্দের তুলিতে পরম মমতায়!
জসীমউদ্দীন গ্রামবাংলার ছবি এঁকেছেন কবিতায়, মনোজ বসু কথাসাহিত্যে- এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার ছিল না। তাঁরা পরস্পর পরস্পরের সাহিত্য সম্বন্ধে অবহিত তো ছিলেনই, তার উপর ছিলেন ব্যক্তিগতভাবেও একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ। মনোজ বসুর নিজের মুখে শুনি সেই কাহিনী, ‘জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬) কবি হিসেবে তখন খুব নাম করে ফেলেছেন। একদিন আমি বসে আছি, জসীম এসে আমায় নাম ধরে খোঁজ করছে, অমুক কবি কে বলো দেখি। থাকেন কোথায়? চেনো নাকি? আমার একটি কবিতা কোথায় ছাপার অক্ষরে পড়েছে। ভীষণ ভালো লেগেছে তাঁর। যাকে পাচ্ছে, শোনাচ্ছে এবং সারা কলকাতায় কবিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কী উল্লাস আমায় পেয়ে!’ এরপর তাঁরা ঘনিষ্ঠ হয়েছেন, ঘনিষ্ঠভাবে একসাথে কাজও করেছেন। গুরুসদয় দত্তের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ১৩৩৭ সনে বীরভ‚মে পল্লী সম্পদ রক্ষা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হলে জসীমউদ্দীন ও মনোজ বসু সমিতির দুই প্রধান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ থেকে বোঝা যায়, তাঁরা খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন; আর জসীমউদ্দীনের মতো এত বড় একজন কবির সান্নিধ্যে আসার পর তাঁর প্রভাব মনোজ বসুর উপর পড়বে না, এ কল্পনাই করা যায় না। ফলে জসীমের মতো মনোজ বসুর সাহিত্যেরও মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায় গ্রাম। আর মনোজ বসুর গ্রাম মানে ডোঙ্গাঘাটা, গড়ভাঙা, বেলকাটি, মাদারডাঙা, পাথরঘাটা, আটঘরা, হাসাডাঙা প্রভৃতি কেশবপুরের তাঁর দেখা শৈশব-কৈশোরের গ্রামগুলো। আর তাঁর কথার তুলিতে আঁকা জীবন্ত এসব গ্রাম মানেই তো সমস্ত বাংলাদেশ।
মনোজ বসু হাত পাকিয়েছিলেন মূলত কবিতা, ছোটগল্প ও নাটক লিখে। ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল নাট্যকার হিসেবে। নাটক প্লাবন প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা ১৩৪৮ সনে। এর দু’বছর পর প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ভুলি নাই (১৩৫০)। ভুলি নাই উপন্যাস হিসেবে কতটুকু সফল, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ভুলি নাই প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকরা ঔপন্যাসিক মনোজ বসুর কথা আর কখনো ভোলে নাই। এ উপন্যাসটি মনোজ বসুর লেখকঅদৃষ্টও নির্দিষ্ট করে দেয়। নানা কারণে মনোজ বসুর সাহিত্যিক জীবনে ভুলি নাই একটি বিশেষ দিকনির্দেশক হয়ে সীমাহীন গুরুত্ব বহন করে চলেছে।
কবিতা কিংবা ছোটগল্প যত সহজে সার্বজনীন ও সর্বকালিক হয়ে উঠতে পারে, উপন্যাসের পক্ষে তা হয়ে ওঠা ততটাই কঠিন। কারণ উপন্যাসকে সঙ্গত কারণেই মহাকাব্যিক হয়ে উঠতে হয় যেহেতু উপন্যাসের জন্মই মহাকাব্য থেকে। আর মহাকাব্যিক হয়ে ওঠার প্রথম শর্তই হলো একটি নির্দিষ্ট জনপদ, সেই জনপদের জীবন্ত মানুষের সমন্বিত কোলাহল, তাদের মুখের ভাষা, তাদের সম্মিলিত নিত্যকার জীবন, যাকে ঘিরে থাকবে একটি কল্পিত বিশাল প্রেক্ষাপট। উপন্যাসের বিষয়টি যদি কোনো জনপদের শাশ্বত জীবনচিত্রই হয়, তা হলে তো সোনায় সোহাগা; কিন্তু তা না হয়ে বিষয়টি যদি হয়ে পড়ে স্রেফ রাজনৈতিক, তাহলে যত বিপত্তি, ঔপন্যাসিক তখন যদি খুব নেকবান না হন তা হলে শিল্পের পুলসিরাত পার হওয়া তাঁর পক্ষে সত্যিই খুব দুরূহ হয়ে পড়ে।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, ভুলি নাই উপন্যাসটির উপযোগিতা বাংলাদেশে একদমই নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কথাটি বিপরীত দিক দিয়ে হানড্রেন্ট পার্সেন্ট সত্য। রাজনৈতিক উপন্যাসের এই এক সমস্যা। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি জন্ম নেয়ার পর অনেক কবি-সাহিত্যিক আবেগাপ্লুত হয়ে পাকিস্তানকে নিয়েই কিছু লেখা লিখে ফ্যালেন। ’৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলে লেখাগুলো মাঠে মারা যায়। এর অর্থ এই নয় যে, দেশকে নিয়ে কিছু লেখা চলবে না, চলবে তো বটেই, তবে সে দেশ হতে হবে শাশ্বত দেশ। পাকিস্তান আমাদের কোনো দেশ ছিল না, এটা ছিল একটা চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্র। মোগল এসেছে মোগল চলে গেছে, ব্রিটিশ এসেছে ব্রিটিশ চলে গেছে, পাকিস্তান এসেছিল, পাকিস্তানও চলে গেছে, বাংলাদেশ রয়ে গেছে বাংলাদেশেরই জায়গায়। ফলে শাশ্বত বাংলাকে নিয়ে যারা সাহিত্য রচনা করেছেন, সে পাকিস্তান আমলে হোক, ব্রিটিশ কি মোগল আমলে, সেসব সাহিত্য শাশ্বতই রয়ে গেছে, গায়ে তাদের কালিমা পড়েনি একটুও। পূর্ব বাংলা বলে এখন আর কোনো দেশ না থাকলেও সৈয়দ আলী আহসানের ‘আমার পূর্ব-বাংলা’ তো ঠিকঠিকই পঠিত হচ্ছে এই দেশে বারবার, অসংখ্যবার প্রতিদিন। মনোজ বসুর ভুলি নাই স্রেফ একটি রাজনৈতিক দল কংগ্রেসকে নিয়ে রচিত, যে দলটির এ দেশে কোনো অস্তিত্বই নেই ’৪৭ সালের দেশ বিভাজনের পর থেকে। সঙ্গত কারণেই পাকিস্তানকে নিয়ে রচিত ক্ষীণায়ু সাহিত্যের মতো মনোজ বসুর এ সাহিত্যকর্মটিও এ দেশে নি®প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
ভুলি নাই-এর গুরুত্ব এখন এর ঐতিহাসিক ভ‚মিকার কারণে। কংগ্রেসের মতো একটি বিশাল দল, ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির একমাত্র কারণ ছিল যে দলটি, তার রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে হলে, এ দলটির স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তৎকালীন কর্মীদের আত্মত্যাগের কাহিনী জানতে হলে মনোজ বসুর ভুলি নাই’র কোনো বিকল্প নেই। উপন্যাসটি আত্মকথনমূলক ভঙ্গিতে রচিত। এ স্টাইলটি ছিল তাঁর অত্যন্ত পছন্দনীয়, যেটি ঘুরেফিরে বারবার তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর উপন্যাসগুলোতে। এটা অবশ্য বাংলা উপন্যাসসাহিত্যে প্রবর্তিত কোনো নতুন ধারা ছিল না । শরৎচন্দ্র অনেক আগেই এ পদ্ধতিতে রচনা করে ফেলেছেন তাঁর বিখ্যাত আত্মজৈবনিক উপন্যাস শ্রীকান্ত। এ ধারার প্রধান যে সুবিধাটি তা হলো, পাঠক সহজেই গল্পের অন্তর্জগতে ঢুকে পড়তে পারেন। শরতের উপন্যাস পড়ার মতো একটা ঘোরের মধ্যে পড়তে হয় পাঠককে মনোজ বসুর ভুলি নাই পড়তে গিয়েও। এটি পড়তে পড়তে শরতের বিখ্যাত পথের দাবি উপন্যাসটির কথাও পাঠকদের মনে পড়ে যেতে পারে। কারণ দুটি উপন্যাসেরই প্রেক্ষাপট-আবহ প্রায় একইরকম, যদিও শরতেরটার কাহিনী বহির্মুখী যেখানে মনোজেরটা অন্তর্মুখী। দুটোই রাজনৈতিক ও বৈপ্লবিক; তবে মনোজ শরতের রোমাণ্টিক জগৎ থেকে ফিরে এসেছেন বাস্তবে, একেবারে গ্রামবাংলায়- এখানেই মনোজের কৃতিত্ব।
মনোজ বসুর সমস্ত সাহিত্যকর্মের মূল ভিত্তি হলো তাঁর নিজ জন্মভ‚মি ডোঙ্গাঘাটা ও তার আশপাশ এলাকা। ভুলি নাই’র কাহিনীও ডালপালা গজিয়ে মহীরূহ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলকে ঘিরেই। কুন্তলদা, আনন্দকিশোর, রানী, সোমনাথ, মায়া, মল্লিকা, শঙ্করÑ ভুলি নাই’র এসব চরিত্র মনোজ বসুর মনোজগতে জন্ম নিলেও এরা সকলেই এতদঞ্চলের মানুষের এক একজন প্রতিনিধি। চরিত্রগলো কংগ্রেসের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। দেশকে স্বাধীন করার জন্যে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে আকুতি ও আত্মত্যাগের স্পৃহা, তা পাঠকের অন্তর্জগতে আলোড়ন তোলে বৈ কি। বিশেষ করে কুন্তলদার বৈরাগ্য জীবন, তার নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম, শেষপর্যন্ত দেশের জন্যে তিলে তিলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া তাকে ভুলি নাই’র নায়কই শুধু করেনি, একটি অনুসরণীয় দেশপ্রেমিক দেবতাও বানিয়ে ফেলেছে, যার কথা পাঠকের পক্ষে ভুলে যাওয়া কঠিন। কেবল মনোজ বসুর পক্ষেই এমন সব জীবন্ত রাজনৈতিক চরিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। কারণ তিনি নিজেও একজন সক্রিয় কংগ্রেসকর্মী ছিলেন ছাত্রজীবনে। বাগেরহাট কলেজে ছাত্র থাকাকালীন তিনি কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ রাজনীতির কারণেই এক বছর লস দিয়ে তাকে আইএ পাস করতে হয়। সেটা ১৯২২ সালের কথা। এরপর অবশ্য তিনি রাজনীতির সঙ্গে আর প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক রাখেননি। কিন্তু বিপ্লববাদীদের তিনি গোপন তথ্যাদি সরবরাহ করতেন। ১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলন পর্যন্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর মোটামুটি একটা সম্পর্ক ছিল। এরই ফসল তাঁর ভুলি নাই, সৈনিক, আগস্ট ১৯৪২, বাঁশের কেল্লা প্রভৃতি রাজনৈতিক উপন্যাস।
ভুলি নাই মনোজ বসুর প্রথম উপন্যাস হলেও শৈল্পিক গুণাবলির যথেষ্ট ছাপ রয়ে গেছে এর পরতে পরতে। কাহিনী নির্মাণে যেমন তিনি সফল, কাহিনী বর্ণনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত। তাঁর ভাষা সরল, ছোট ছোট বাক্য ব্যবহারের তিনি পক্ষপাতী, কিন্তু জড়তা নেই কোথাও। সে ভাষা পাঠককে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, কাহিনীর শেষপর্যন্ত তাকে না পৌঁছিয়ে ছাড়ে না। রঙ্গ, ব্যঙ্গ, বীররস, করুণরস প্রভৃতি ব্যঞ্জনার এত বেশি সমাবেশ এখানে ঘটেছে যে, পাঠককে অবাক হতেই হয় মনোজ বাবুর শিল্পরুচির বহর দেখে। যাঁরা তাকে বনজ মোষ বলে একসময় বিদ্রুপ করতেন, তাঁদের কপালেও চোখ উঠে যেতে পারে বৈ কি! তবে এটা ঠিক, মনোজ বসুকে কথাসাহিত্যিক হিসেবে চিনতে হলে ভুলি নাই নয়, পাঠককে যেতে হবে তাঁর পরিণত বয়সের লেখা জলজঙ্গল (১৩৫৯), নিশিকুটুম্ব (১৯৭০), সেই গ্রাম সেইসব মানুষ (১৯৭৬) প্রভৃতি উপন্যাসের কাছে, যেখানেই মূলত ফুটে উঠেছে মনোজপ্রতিভার শিল্পকুসুম।
লেখক : কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক