ছন্দকার সুকুমার রায়ের মজার তিনটি ছড়া

আড়ি

কিসে কিসে ভাব নেই ? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে-
বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে ।
শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি,
সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী !
আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনদিন্‌ সে ?
কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয় ।
তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা দেখনি ?
ছ্যাঁক্‌ ছ্যাঁক্‌ রাগ যেন খেতে আসে এখনি ।
তার চেয়ে বেশি আড়ি আমি পারি কহিতে-
তোমাদের কারো কারো কেতাবের সহিতে ।

 

 

আজব খেলা

সোনার মেঘে আল্‌তা ঢেলে সিঁদুর মেখে গায়
সকাল সাঁঝে সূর্যি মামা নিত্যি আসে যায় ।
নিত্যি খেলে রঙের খেলা আকাশ ভ’রে ভ’রে
আপন ছবি আপনি মুছে আঁকে নূতন ক’রে ।
ভোরের ছবি মিলিয়ে দিল দিনের আল জ্বেলে
সাঁঝের আঁকা রঙিন ছবি রাতের কালি ঢেলে ।
আবার আঁকে আবার মোছে দিনের পরে দিন
আপন সাথে আপন খেলা চলে বিরামহীন ।
ফুরায় নাকি সোনার খেলা ? রঙের নাহি পার ?
কেউ কি জানে কাহার সাথে এমন খেলা তার ?
সেই খেলা, যে ধরার বুকে আলোর গানে গানে
উঠ্‌ছে জেগে- সেই কথা কি সুর্যিমামা জানে ?

 

আবোল তাবোল

আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে খ্যাপার গানে
নাইকো মানে নাইকো সুর।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন্‌ সুদূর।
আয় খ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্‌ ধিন্‌,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
আজ্‌গুবি চাল্‌ বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে-
আয়রে তবে ভুলের ভবে
অসম্ভবের ছন্দেতে।