কবি বদরুল হক অনু’র তিন’টি কবিতা

কবি বদরুল হক অনু’র তিন’টি কবিতা

মানুষ

কিছু কিছু মানুষ আছে মেঘের মতো,
যারা থাকলে ছায়া পাওয়া যায়,
তাদের সরে যেতে নেই।
কিছু কিছু মানুষ আছে নদীর মতো,
তারা জোয়ারে আসে ভাটায় চলে যায়;
তাদেরও একদম চলে যেতে নেই।
কিছু কিছু মানুষ আছে চাঁদের মতো,
তারা পুর্নিমার জোয়ারে ভাসায়;
অমাবস্যার আধারে যদিও তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না,
তবুও তাদের ফিরে আসার আশায় বুক বাধা যায়।
কিছু কিছু মানুষ আছে সূর্যের মত-
যার আলো জীবনের খুব প্রয়োজন;
কিন্তু তার প্রখর উত্তাপে মাঝে মাঝে হয়তো পুড়ে ছাই হতে হয়।
কিছু কিছু মানুষ আছে রাতের মতো-
আধারে থাকে ঢাকা,
কিছু কিছু মানুষ আছে বর্ষার মতো-
যার কাজ অঝোরে কাঁদাতে থাকা।
কিছু কিছু মানুষ আছে ধুমকেতুর মতো-
ক্ষণিকের তরে এসেই যায় চলে।
কিছু কিছু মানুষ আছে জোনাকির মতো-
চুপিচুপি কতো কথা যায় বলে!
এসব মানুষদের একদম চলে যেতে নেই।
সব মানুষদের নিয়েই আমরা বাঁচি।
তাইতো আমরা মানুষ- মেঘ নদী সূর্য চাঁদ তারা বৃষ্টির সাথে মিলে মিশে আছি।

 

লাশ

কে যেন একটা কাক মেরে ফেলে রেখে দিয়েছে গলির রাস্তার পাশে;
এতো দ্রুত খবরটা বাতাসে ছড়ালো যে, তার জাত ভাই হাজার খানেক কাক হয়েছে জড়ো।
বাড়ির ছাদে কাক, গাছের ডালে কাক, বিদ্যুতের তারে কাক,
কখনো এরা চুপচাপ নিরবতায় জানায় স্বজাতির দুঃখে শোক,
কখনো প্রতিবাদে ‘কা’ ‘কা’ রবে আলোরিত করে আকাশ বাতাস চারিধার।

আমি বড় রাস্তাটা পেরিয়ে একটু আগেই এসেছি এখানে-
সেখানে অচেনা মানুষের একটা লাশ পড়ে ছিল-গুলি করে অথবা গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে।

দু’একজন কৌতুহলি ছাড়া আর কেউ নেই সেখানে,
জানা যায়নি লাশের পরিচয়- ধর্ম, গোত্র, পেশা!
এখনো সে অজ্ঞাত লাশ হিসাবেই পড়ে আছে।
প্রতিবাদে কোন ‘মানুষ’ হয়নি জড়ো।

দু’দিন পরে বিকেলে টিভির খবরে দেখলুম, সেদিন যে লাশ পড়ে ছিল বড় রাস্তার পাশে গুলিবিদ্ধ অথবা গলাকাটা তার পরিচয় পাওয়া গেছে।

প্রতিবাদ জানাতে প্লে কার্ড, ব্যানার হাতে জড়ো হয়েছে কিছুসংখক সাংবাদিক!
অথবা কিছুসংখ্যক পুলিশ!
অথবা কিছুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! কিংবা প্রাইমারি ইস্কুলের শিক্ষক!
অথবা কিছু ট্রাক ড্রাইভার! কিংবা বাস ড্রাইভার!

অথবা কিছুসংখ্যক স্বর্ন ব্যবসায়ী! কিংবা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী! কিংবা মুদি দোকানদার! অথবা…… অথবা…….

অথবা….

কিন্তু মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে কোন মানুষ হয়নি জড়ো।

আজ আমরা আর মানুষ নই….

পেশা ও পোশাকের আড়ালে আমাদের মনুষ্যত্ব পরেছে ঢাকা।

মানুষের স্বজাতি আর মানুষ নেই,

সাংবাদিকের স্বজাতি সাংবাদিক;

শিক্ষকের স্বজাতি শিক্ষক

পুলিশের স্বজাতি পুলিশ

আর্মির স্বজাতি আর্মি

ব্যবসায়ীর স্বজাতি ব্যবসায়ী

ড্রাইভারের স্বজাতি ড্রাইভার..

আর যার এসব পরিচয় নেই,

সে শুধুই অজ্ঞাত লাশ।

আমাদের মনুষ্যত্ব আজ জীবন্ত লাশ।

 

সাধু ও চোর

কত চোর গেল সাধু বনে
কত সাধু চোর মনে মনে
কর্মে হয় ‘সাধু-চোর’ বিচার!

গোপন থাকে কতো কর্ম
হয় না তা অতি অধর্ম
প্রকাশিলেই আচার অনাচার!

মনে চোর মনে সাধু
সদাই দ্বন্দ্ব শুধু
মন হলো দু’য়েরই আধার।

দ্বন্দ্বে জিতে গেলে চোর
খোলে অপকর্মের দোর
দু’কূলই হবে শুধু কাঁদার।

কর্মে সাধু যবে হবে
মনেতে চোর বন্দী রবে
সাধু নাম ওপারে ও ভবে তার