গোক্ষুর বধ
আরমান ইমন
গ্রীষ্মের মধ্যরাত। চতুর্দশীর চাঁদ ঝলমল করছে। কিছুদিন ধরে এই সময়ে ঘুম ভেঙে যায় জমিরুদ্দিনের। আজও ভেঙে গেলো। ষাটোর্ধ জমিরুদ্দিন কাঁশতে কাঁশতে তার বউকে বললো, “অই, মাগি চৌকির তলে কী রাখছোস, ইন্দুরে আওয়াজ করে ক্যান? অসুইখ্যা শইলে ইন্দুরের অত্যাচার সজ্জি হয়? কাইলই পরিষ্কার করবি।”
জমিরুদ্দিনের বউ রাগের ঝামটি মেরে বললো, “আমি তো বেবাক দিনই হুইড়া থই। তবু রোজ রাইতে ইন্দুর কইত্তে আয়ে কেমনে কমু। আইন্নে বাজার থেইক্কা একটা ইন্দুরমারার কল আনলে কি হয়?”
বুড়ো জমিরুদ্দিন পিঠ ঘুরিয়ে চোখ বোজে। পরদিন গামছা একটা কাঁধে নিয়ে বাজারের দিকে হাঁটে। মাথায় রোদ করে ঘরে ফেরে। হাতে ইঁদুর ধরার কল। কলে একটু ছোঁয়া লাগলেই ইঁদুরের মাথা থেতলে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। দোকানদার বলেছে।
‘আজ দেহি, ক্যামনে জ্বালাস?’ মনে মনে ভাবে জমিরুদ্দিন। তারপর বউকে ডাকে। নিয়মকানুন শিখিয়ে দেয়। কলটার মুখে সামান্য শুঁটকিমাছ রেখে দেওয়ার কথাও বলে দেয়।
রাতে খেয়েদেয়ে নির্ঞ্ঝাট ঘুমাবে বলে বেশ আয়েশী ভাবে বিছানায় গেলো জমিরুদ্দিন। কিছুক্ষণ বেশ ভালোই কাটলো। তারপর হঠাৎ আওয়াট। খটখট আওয়াজটা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ বেশি। একটু পর আওয়াজের মাত্রা বাড়তে লাগলো। বুড়া বললো, ‘ধুর আর ভাল্লাগে না, এই ইন্দুরের অত্যাচারে। তারপর এপাশ ওপাশ করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।’
বুড়ি সকালে ঘুম থেকে উঠে কল বের করতে গিয়ে আৎকে উঠলো। চোখ তার চড়কগাছ। একটা চিৎকার দিয়ে তারপর স্তব্ধ হয়ে গেলো। বুড়ো দৌড়ে এসে দেখে বুড়ি বড় বড় চোখে বসে কাঁপছে। দৃষ্টি তার একটি জায়গায় স্তব্ধ।
জমিরুদ্দিন দৃষ্টির রাস্তা বেয়ে নিজের চোখকে হাঁটিয়ে নিলো। যেখানে পৌঁছে থামলো সেখানে সেই ইঁদুর ধরার কল। তাতে আটকে আছে মস্ত গোখরা সাপ। তার মুখ নিস্তব্ধ থাকলেও চোখ আৎকে ওঠে। তারপর মরা গোখরা বুঝে সামলে নেয় আর বলে, ‘দেখো আল্লাহর মাইর, ইন্দুরের কলে মুখ দিয়া গোক্ষরও রেহাই পাইলো না।’